
নিজস্ব প্রতিনিধি : শুরু হয়েছে মাহে রমজান। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে, নরম সোনালি আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে রাজশাহীর আকাশে-বাতাসে। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসছে আসরের আজান, আর তার সঙ্গেই যেন তাল মিলিয়ে নগরীর প্রতিটি মোড়ে জমে উঠেছে ইফতার বাজার।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠেছে রাজশাহীর ব্যস্ত সড়কগুলো। সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, আলুপট্টি, কুমারপাড়া, ভদ্রা, সোনাদিঘির মোড়, সিঅ্যান্ডবি মোড়, লক্ষ্মীপুর, গণকপাড়া, বিন্দুর মোড়, নিউমার্কেট সব জায়গায় চলছে বাহারি ইফতার সামগ্রীর জমজমাট বিকিকিনি। অলিগলি থেকে শুরু করে রাজশাহীর নামকরা রেস্তোরাঁ পর্যন্ত সর্বত্রই রোজাদারদের জন্য সাজানো হয়েছে সুস্বাদু ইফতারির পসরা।
জিরো পয়েন্টে বিশাল হাঁড়িতে হালিম নাড়ছেন এক হোটেল কর্মচারী। তার পাশেই বিক্রি হচ্ছে সুগন্ধি ধনিয়া-পুদিনার চাটনি, লেবু, শসা, কাঁচামরিচের বাহারি পসরা। একটু এগোলেই চোখে পড়ে ঝুড়িভর্তি মুড়ি আর কড়াইতে টগবগ করে ফুটতে থাকা পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, ডিম চপ।
কুমারপাড়ার অলিগলিতে সাজানো রয়েছে সুস্বাদু জিলাপির স্তূপ। কড়াইয়ে ডুবন্ত জিলাপিগুলো সোনালি রঙ ধারণ করছে, আর তার সুগন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তার একপাশে খেজুরের স্তূপ, যার মধ্যে ইরানি, মিশরীয় ও সৌদি খেজুরও রয়েছে।
গণকপাড়ার কিছু দোকানে দেখা মিলছে বিশেষ ইফতার প্যাকেজের। স্পেশাল ফিরনি, ক্ষীরসা, ফালুদা, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন ফ্রাই, মাটন লেগ রোস্ট সব মিলিয়ে যেন এক স্বাদের রাজ্য। নামিদামি রেস্তোরাঁগুলোও বসে নেই, তারা বাহারি অফার নিয়ে হাজির হয়েছে। নগরীর রহমানিয়া রেস্তোরাঁয় বিশাল পাত্রে সাজানো রয়েছে স্পেশাল গরুর তেহারি, শিক কাবাব আর মাটন লেগ রোস্ট। এছাড়াও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে রয়েছে স্পেশাল ফিরনি।
দাম কিছুটা বাড়লেও ইফতারির প্রতি মানুষের আগ্রহ একটুও কমেনি। কুমারপাড়ার ইফতার সামগ্রী বিক্রেতা মামুন হোসেন বলেন, উপকরণের দাম বেড়েছে, তাই ইফতার সামগ্রীর দামও কিছুটা বাড়াতে হয়েছে। তেল, ছোলা, মসলা সবকিছুর দাম বাড়ায় আমাদেরও খরচ বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার পরেও ক্রেতাদের অভাব নেই। সকলেই যেন সাজানো পসরা থেকে ইফতারি কেনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন দীর্ঘ একটি বছর।
সাহেববাজারের বিক্রেতা ইমন ইসলাম জানালেন, ছোলার প্রতি ১০০ গ্রাম ৩০ টাকা, বুন্দিয়া ৩০ টাকা, খেজুর ৪৫০ টাকা কেজি, জিলাপি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু অভিজাত রেস্তোরাঁয় জিলাপির দাম ৬০০ থেকে ১০০০ টাকাও ছুঁয়েছে। তবুও সবকিছুই বিক্রি হচ্ছে স্বগৌরবে।
চিলিস রেস্তরাঁর রেস্তোরাঁর কর্মীরা জানান, তারা ১২ ধরনের কাবাব বিক্রি করছে। এছাড়াও তাদের রয়েছে রেশমি জিলাপি। ছোলা, বুট, বেগুনিসহ অন্যান্য নিয়মিত ইফতার আইটেম তো রয়েছেই।
অন্যদিকে, ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। গণকপাড়ায় ইফতারি কিনতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী নাঈমা আক্তার জানান, রোজায় সকলের সঙ্গে ইফতার করার মধ্যে এক অন্যরকম আনন্দ রয়েছে। আমরা প্রায় প্রতিদিন একত্রে হয়ে বাইরে থেকে ইফতারি কিনে আমাদের মেসে সবাই মিলে ইফতার করি। মেসে থাকার দরুন ইফতারি বানানো হয় না, তাই বেশিরভাগ দিন বাইরেই নির্ভর করতে হয়।
সাহেববাজারে ইফতার কিনতে আসা মেশকাত রহমান আক্ষেপ করে বলেন, বুট, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও জিলাপিসহ বিভিন্ন ইফতার পণ্যের দাম এবার বেশি। গত বছর যে বেগুনি ৫ টাকায় পেয়েছি, এবার সেটা ১০ টাকা হয়ে গেছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করছি।
রোজাদারদের জন্য বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার সময় নেই। বড় রেস্তোরাঁগুলো তাদের সামনে বিশাল ব্যানার টাঙিয়ে বিভিন্ন অফারের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে কিছু দোকান। বিশেষ করে সাহেববাজার ও গণকপাড়ার নামিদামি হোটেলগুলোর সামনে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। একদিনের জন্য নয়, পুরো রমজানজুড়ে এভাবেই মুখর থাকবে রাজশাহীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ইফতারের এই স্বাদের মেলা।